এইতো জীবন
-প্রিন্স ঠাকুর
ভূমিষ্ঠ থেকে শুরু হয় হাঁটা; সময়ের চাকায় ঘূর্ণায়মান বয়স
হাঁটছে গুটিগুটি পায়ে, হাঁটতে হাঁটতে শৈশব মাড়িয়ে কৈশোর।
গন্তব্যহীন জীবন পথে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটা
হাঁটছে তো হাঁটছে, হাঁটছে তো হাঁটছে বিরামহীন।
হাঁটার মাঝে, খাওয়ার মাঝে, কাজের মাঝে রাতে ঘুমের মাঝে
পায়ের পর পা, মাইল কি মাইল―
ভাবনায়, চিন্তায়, চলায় বলায় বয়সে এমনকি শরীরে।
ক্লান্তি, লজ্জা, ভয়, রাগ হাসি-কান্না সুখ-দুঃখ সবাই পিছু পিছু
পালাক্রমে ভালোবাসার জাল বিস্তার।
গাঁ ছেড়ে পথে, পথ পেরিয়ে শহর, শহর ছেড়ে দূরে…
হাঁটতে-হাঁটতে, হাঁটতে-হাঁটতে, হাঁটতে-হাঁটতে
আমপাড়া জামপাড়া মিলিয়ে যায় স্মৃতির অ্যালবামে।
এক পা-দু’পা, এক পা-দু’পা করে যৌবনে পা, জন্ম নেয় স্বপ্ন,
লাল নীল হলুদ সাদা কমলা; এমন কি সিঁদুর লালেরা ভিড় করে আষ্টেপৃষ্ঠে,
নতুন পৃথিবী দেদীপ্যমান। হাঁটতে হাঁটতে হাঁটা।
শরীরে উজ্জ্বল লাবণ্যতা―চোখে রঙিন চশমা;
পা চলে প্রকৃতির নিয়মে। সিঁদুর লাল রং মিশে যায় আত্মার আত্মীয়ে,
শুরু হয় নতুন জীবন। এখানে সুখ-দুঃখেরা পালাক্রমে আসতে থাকে
কমলা রং জন্ম দেয় নতুন পথ, দিন যেতেই অন্য পথ এসে
ভিড় করে দুয়ারে। বেগুনি আসে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে দিন, মাস, বছর যায়
শরীরে আসে ক্লান্তি, চামড়ায় পড়ে ভাঁজ।
চোখের নিচে পড়ে কালি, পাক ধরে চুল, দাঁত যায় খসে।
শক্তি হারাতে থাকে শরীর, চামড়া হয় ঢিলে খসখসে
যৌবন―যৌবন দেয় ফাঁকি, চোখ ইশারায় বৃদ্ধকাল।
বৃদ্ধকাল চলে নির্ভরতায়। চলতে চলতে চলে―
এদিকে পথ খোঁজে পথ, সেখানে অন্য পথ ডালপালা,
শাখা ছাড়তে থাকে চারদিক। প্রকৃতির নিয়মে চলতে থাকে সব সব সব…
হাঁটা হঠাৎ করে এক হোঁচটে থেমে যায়; নামে অন্ধকার, ঝাপসা চোখে অন্ধকার
আসে আলিঙ্গনে মৃত্যুকাল। তারপর… তারপর শব, তারপর সব শেষ।
০৬.১২.২০০৩ ইংরেজি, বাপের ভিটে, রুন্দিয়া, নড়াইল।
কাব্যগ্রন্থ : শূন্যতার ঘ্রাণ, ২০২০।
Related Posts
স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা
উড়াই স্বাধীন আকাশে,
স্বাধীনতার...
শোবার ঘরের সামনে
দরজার পাশেই
বিদেশি ফুলের গাছ;
থোকায় থোকায়...